নিজস্ব প্রতিবেদক
উত্তরা ব্যাংকের এমডি রবিউল হোসেনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অপসারনের দাবিতে মানব বন্ধন করেছেন বিপ্লবী ছাত্র জনতা। আজ সকাল ১১ টা ৩০ মিনিটে উত্তরা ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের মূল ফটকে বিপ্লবী ছাত্র জনতার ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে তারা ব্যাংকের কর্মকর্তা কর্মচারী ও বিপ্লবী ছাত্র জনতার নেতৃবৃন্দ ছাত্রদের স্বাগত জানিয়ে একাত্মতা পোষণ করে মানববন্ধনে যোগ দেন।
মানববন্ধনে পতিত স্বৈরাচার সরকারের সুবিধাভোগী এমডি রবিউল হোসেনের বিভিন্ন কুকর্ম তুলে ধরা হয় এবং তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করা হয়। ছাত্ররা তাদের বক্তব্যে উত্তরা ব্যাংকের এই লুটেরা, কমিশন খেকো, অর্থ পাচারকারী, ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর এমডি রবিউল হোসেনের অপসারনের দাবিতে উত্তরা ব্যাংকের প্রধান ফটকে তালা এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা এ রবিউলের দ্রুত অপসারণ না হলে আরোও কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারী দেয় শিক্ষার্থীরা।
এই সময় ছাত্ররা ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিভিন্ন জাল জালিয়াতি ও অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। এমডি রবিউল টানা ২০১৬ সালের ১০ মে থেকে অদ্যাবদি এমডি পদে দীর্ঘ সাড়ে ৮ বছর স্বৈরাচারী কায়দায় এমডি পদ কুক্ষিগত করে রাখেন। পদে থেকে তিনি সীমাহীন দূর্নীতি করে অর্থ পাচার, নামে বেনামে ঋণ দিয়ে কমিশন বাণিজ্য করে ব্যাাংকের ক্ষতি সাধন করেছেন। অত্র ব্যাংকের আওয়ামী বিরোধী বিপ্লবী ছাত্র জনতার নেতাদের হয়রানীসহ চাকরীচ্যুত করা, করোনা মহামারীর প্রনোদনার টাকা আত্মসাত, ঋণ খেলাপীদের ঋণ দিয়ে নিজের পকেট ভর্তি করা সহ অসংখ্য অভিযোগের পরও অদৃশ্য শক্তির বলে চাকরীতে বহাল আছেন বলে অভিযোগ উঠেছে বলে তারা জানান।
দেশ ছেড়ে পালানো সাবেক প্রধানমন্ত্রী পরিবারের আস্থাভাজন হিসেবে সাড়ে ৮ বছর উত্তরা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে আছেন রবিউল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নানা অপকর্মের সহচর রবিউল তৃতীয় মেয়াদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে ব্যাংকটির মালিকানাও দিয়েছেন। নথিতে দেখা যায় উত্তরা ব্যাংক সিকিউরিটিজ ব্রোকারেজ হাউসে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার নামে যৌথ বিও একাউন্ট খুলে তাদের শেয়ার হস্তান্তর করেন।
সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবায়েতের যোগসাজসে শেয়ার ম্যানিপুলেট করে শেখ মুজিবের নামে ৪০টি উদ্যোক্তা শেয়ার হস্তান্তর করা হয় যার বর্তমান মূল্য ৪৫ লাখ টাকার অধিক বলে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন উত্তরা ব্যাংক শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা। শেয়ার হস্তান্তরের পরেই শেখ হাসিনার সাথে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক আকাশচুম্বী হয়ে উঠে। ফলে শেখ হাসিনার ব্রাজিল ও স্পেনের সফর সঙ্গী হিসেবে এই রবিউল হোসেনকে মনোনীত করা হয়।
ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, উত্তরা ব্যাংকের একজন পরিচালককে সুবিধা দিতে টয়োটা করোলা ১.৬ এল গাড়ীটি উৎকোচ হিসেবে নেন উত্তরা ব্যাংকের এই দূর্নীতিবাজ এমডি। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবহিত না করেই স্পেশাল বোনাস ও বৈশাখী ভাতা গ্রহণ করেছেন তিনি। এ জন্য তাকে ১২ লাখ ৯০ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে অডিট আপত্তির মুখে সেই টাকা ফেরতও দিয়েছেন রবিউল।
বর্তমানে উত্তরা ব্যাংকের এমডির মাসিক বেতন ১৭ লাখ টাকার অধিক। এর মধ্যে মূল বেতন, বাসা ভাড়া, বাবুর্চি, গার্ড, সার্ভিস চার্জ, বাসা মেরামত, আসবাবপত্র, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, টেলিফোন বিল, ঈদের বোনাস এবং জিপ গাড়ীর খরচ অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এর বাইরেও তিনি ২০১৮ থেকে ২০২২ সালে করোনাকালীন ভাতা, স্পেশাল বোনাস এবং বৈশাখী ভাতা গ্রহণ করেছেন অথচ বাংলাদেশ ব্যাংককে জানান নি। এছাড়া ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত চিকিৎসা বাবত তিনি ২৪ লাখ ২৯ হাজার ৪৫৩ টাকা ব্যাংক থেকে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী যত টাকা রাজস্ব দেওয়ার কথা তা তিনি পরিশোধ করেননি। শুধু তাই নয় তার স্ত্রীর বিদেশে অপারেশনের জন্য ব্যাংক থেকে ৫০ লাখ টাকা বোর্ডের মাধ্যমে পাশ করিয়ে নিয়েছেন যা নজিরবিহীন। অথচ কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য কোনরকম আর্থিক সুবিধা দিতে সর্বদা গড়িমসি করে থাকেন এই দূর্নীতিবাজ রবিউল।
উত্তরা ব্যাংক শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবু মোঃ আহসানুল হাবীব জানান, শেখ হাসিনার অর্থ যোগানদাতা বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদারের প্রতিষ্ঠান নাসা গ্রুপকে কারওয়ান বাজার শাখা থেকে ২০০ কোটি টাকা, সালমান এফ রহমানের প্রতিষ্ঠানকে ৪০ কোটি টাকা ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানের স্ত্রী রোকেয়া বেগমকে উত্তরা শাখা থেকে ২১ কোটি টাকা অবৈধভাবে ঋণ দিয়ে উত্তরা ব্যাংককে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন এই ধুরন্দর এমডি রবিউল হোসেন। ২০২১ সালে কোনরকম নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নিজের আত্মীয় আবদুল্লাহ আল নোমানকে উত্তরা ব্যাংক সিকিউরিটিজ একচেঞ্জ হাউজের দায়িত্ব প্রদান করে তার মাধ্যমে শেয়ার গ্যামলিং করে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা হাতিয়ে নেন রবিউল।
উক্ত নোমানের দূর্নীতি ও অদক্ষতায় ব্যাংকের প্রায় ১৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয় বলে জানা যায়। বিষয়টি ধরা পরলে কোন তদন্ত ছাড়াই নোমানকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এছাড়াও উত্তরা ব্যাংকের লোকাল অফিস থেকে নাভানা গ্রুপের চেয়ারম্যান শফিউল ইসলামকে ১০০ কোটি টাকা, ট্রেড এগ্রোবীক্স ও ছানোয়ারা গ্রুপকে আলাদা ভাবে শত কোটি, গুলশান শাখা থেকে ট্রেড এগ্রো এক্সেলকে শত কোটি টাকা, বৈদেশিক বাণিজ্যিক শাখা থেকে আলিব কম্পোজিটকে ১৫০ কোটি টাকা অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে ঋণ প্রদান করা হয় যার বেশির ভাগই ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।
উত্তরা ব্যাংক কমচারী ইউনিয়নের (বি-১৫৪৫) মহাসচিব সাখাওয়াত হোসেন জানান, ৭ জানুয়ারীর নির্বাচনের আগে সরকার বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়ায় অনেক কর্মকর্তা কর্মচারীকে শাস্তি দিয়েছেন এই রবিউল। স্বাভাবিকভাবেই ৫ আগষ্টের অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনা সরকারের দোসর হিসেবে কাজ করা উত্তরা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অপসারনের দাবিতে উত্তাল হয় ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়। টানা বিক্ষোভের মুখে ৩ দিন অফিসের কাযক্রম বন্ধ রাখেন এবং ৬ আগষ্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এমডি কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন।
বর্তমানে ব্যাংকের এমডি রবিউল বিএনপি’র নেতা শেখ রবিউল আলম রবিকে মোটা অংকের টাকা ও সম্পদের পরিমান সঠিকভাবে জানা যায়নি। দূর্নীতিবাজ এমডি’র অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত কঠোর আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষনা দেন তারা। মানববন্ধনে উত্তরা ব্যাংকের সর্বস্তরের শ্রমিক, কর্মচারী কর্মকর্তা ও বিপ্লবী ছাত্র জনতার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।