নিউজ ডেস্ক:
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অভিযোগে দুই নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলটির বহিস্কার আদেশের ঘোষণা থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনের মাঠে আছেন অন্তত ৩০ নেতা কর্মী। নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিষয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অমান্য করেই মাঠে থাকছেন তারা। তবে কেউ কেউ মনোনয়ন প্রত্যাহারের কথা ভাবলেও অধিকাংশই নির্বাচন করার কথা জানিয়েছে। আর কেন্দ্র বলছে, যারা দলীয় পদে নেই তারা নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপির কিছু করার নেই।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অভিযোগে বহিষ্কৃত নেতারা হলেন পটুয়াখালী সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনির রহমান এবং কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর তাজ। বহিষ্কারের আদেশে বলা হয়েছে, এই দুই নেতাকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় উপজেলা নির্বাচনও বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে দলটি। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির সাবেক ও বর্তমান মিলে অন্তত ৩০ জন নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদের ভোটে মনোনয়ন জমা দেওয়া নেতাদের বিএনপি জানিয়েছে, এই অবৈধ সরকারের নির্বাচনি প্রহসনের অংশীদার না হওয়ার অবস্থান থেকে বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
তবে বেশির ভাগ নেতা দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ভোটে থাকার কথা জানিয়ে বলছেন, এবার উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। তাই মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়েছে। রাজনীতি হচ্ছে জনগণের জন্য আর জনগণের জন্য কাজ করতে ভোটে অংশগ্রহণ ছাড়া বিকল্প নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাদের মধ্যে বিএনপির সাবেক নেতার সংখ্যাই বেশি। তারা নির্বাচনে অংশ নিতে অনড়। তারা বলছেন, দলীয় পদ না থাকায় তাদের নির্বাচনে অংশ নিতে কোনো বাধা নেই। আর পদধারী কয়েকজন নেতা ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও বলছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরও দায়িত্ব না নিতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। তারপরও তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করায় তাকে সহ-সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এর আগেও দলের অনেক নেতা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাদেরকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এবারও অনেকে মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেছেন। তাদের নির্বাচনে অংশ না নিতে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের কথা বলা হয়।
দলীয় নির্দেশনা সত্ত্বেও ভোটে থাকতে চান সরাইল উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সরাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন মাস্টার, ফরিদপুর সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রউফ উন নবী ও যুবদলের সাবেক নেতা কে এম নাজমুল ইসলাম, সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা বিএনপির সভাপতি নগেন্দ্র চন্দ্র সরকার, রাজশাহীর গোদাগাড়ী জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান খান, শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আমিনুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নাজমুল আলম, কুমিল্লার মেঘনা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রমিজ উদ্দিন, নাঙ্গলকোট উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাজহারুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের সাবেক বিএনপি নেতা আশরাফ হোসেন ও ভোলাহাট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বাবর আলী বিশ্বাস, জেলা বিএনপির সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, পিরোজপুর ইন্দুরকানি উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফায়জুল কবির তালুকদার, সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মোহাম্মদ সুহেল আহমদ চৌধুরী, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেবুল মিয়া, যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা সফিক উদ্দিন, ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি শামসুর রশিদ, ফুলপুর পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমরান হাসান ও হালুয়াঘাটে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য আবদুল হামিদ।
অন্যদিকে মনোনয়নপত্র দাখিল করেও দলীয় সিদ্ধান্তের কথা মাথায় রেখে মনোনয়ন প্রত্যাহারের কথা ভাবছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লস্কর, নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ওমরাও খান, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সারওয়ার হোসেন ও সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক মাসুদুল আলম, সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গৌছ খান।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) আবদুস সালাম জানান, যারা দলীয় পদে নেই তারা নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপির কিছু করার নেই। যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাদের প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে। এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। জয়-পরাজয় তো পরের কথা, কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে ভোট করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন তাদের অনেকেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। যাদের বিএনপির পদ নেই-তারা নির্বাচনে অংশ নিলেও তারা তো বিএনপির কেউ না।