বিনোদন নিউজ ডেস্ক:
সাম্প্রতিক কয়েক বছর ধরেই ভারতীয় বলিউডি চলচ্চিত্রে নিখাদ কমেডি ছবির খরা চলছে। দর্শকেরা সামাজিক ইস্যু নিয়ে তৈরি ছবি পাচ্ছে, ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ অ্যাকশন ছবি পাচ্ছে। আরও পাচ্ছে রাজনৈতিক বা হরর ছবিও। কিন্তু অভাব ছিল কেবল নিখুঁত কমেডি ছবির। এই রকমই একটি ছবি ‘ক্রু’। এই ছবির গল্প শুরু দৌড়াদৌড়ি দিয়ে। চলে চোর - পুলিশের খেলা। জায়গাটি আবার বিমানবন্দর। সেখানে সোনার কারবার নিয়ে চলে তুমুল হট্টগোল। তাতে তিন বিমানবালাকে আটকও করা হয়। আর এরপরই অতীত আর বর্তমান মিলিয়ে গল্পের ডানা মেলে উড়াউড়ি। সেই গল্প এবং এর দৃশ্যায়ন চিত্তাকর্ষক হওয়ার কারণেই উপভোগ না করার উপায় নেই!
ছবিটি গেলো ২৯ মার্চ ভারতে মুক্তি পেয়েছে। ছবিটি এসেছে বাংলাদেশেও। স্টার সিনেপ্লেক্সে বড় পর্দাতেই দেখা যাচ্ছে রাজেশ এ. কৃষ্ণান পরিচালিত ‘ক্রু’ ছবিটি। এর গল্প লিখেছেন নিধি মেহরা ও মেহুল সুরি। ছবির মূল তিন চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিন তারকা - টাবু, কারিনা কাপুর খান ও কৃতি শ্যানন। গুরুত্বপূর্ণ আরও কয়েকটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন দিলজিৎ দোসাঞ্জ, কপিল শর্মা, রাজেশ শর্মা ও শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। সব মিলিয়ে হেভিওয়েট অভিনয়শিল্পীদের তালিকা বেশ লম্বা। তাই ট্রেলার প্রকাশের পর থেকেই ‘ক্রু’ নিয়ে দর্শকমহলে দারুন আগ্রহ ছিলো।ছবিটি নিয়ে আগ্রহের প্রধানতম কারণ হলো এটি কমেডি ঘরানার।
ছবির শুরুর দৃশ্য কিছুটা তো বলাই হয়েছে। এরপর আসলে পুলিশের জেরা করার পর্ব শুরু হয়। মূলত এয়ারলাইনসে সোনা পাচারের ঘটনা নিয়েই এই ছবির পুরো গল্প। তিন বিমানবালার ভূমিকায় আছেন টাবু, কারিনা কাপুর খান ও কৃতি শ্যানন। এই তিন চরিত্র ঘিরেই পুরো কাহিনী আবর্তিত হয়। ধীরে ধীরে সামনে আসে এই তিন জনের জীবনের বিভিন্ন সময়ের নানা ঘটনা। তিন জনেরই জীবনে স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু বাস্তবতার ধাক্কা খেয়ে খেয়ে তা ফিকে হয়ে আসে। শেষটায় তিন নারীই আঁকড়ে ধরে এয়ারলাইনসের এয়ারহোস্টেসের চাকরি। যদিও একটি ডুবন্ত এয়ারলাইনস কোম্পানির এয়ারহোস্টেস হওয়া এদের কারোরই লক্ষ্য ছিলো না। কেউ হয়তো চেয়েছিলেন রেস্টুরেন্টের মালিক হতে, কেউ চেয়েছিলেন নিজের মতো করে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন কাটাতে। আবার কারও স্বপ্ন ছিলো আকাশে উড়ার। কিন্তু সবটাই অবশেষে এসে ঠেকে কোহিনূর এয়ারলাইনসে।
এই তিন নারী চরিত্র চাকরি দিয়েই জীবনের সাধ - আহ্লাদগুলো পূরণ করতে চেয়েছিলেন। আশা - ভরসার জায়গা বানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জীবনের সংকটগুলো যেভাবে আমাদের বদলে ফেলে, সেভাবেই এই তিন নারী নানা দ্বিধা - দ্বন্দ্বের পর একপর্যায়ে বদলে যেতে বাধ্য হন। আর তখন থেকেই ঘুরে যায় ভাগ্যের চাকা। হ্যাঁ, পথটি সঠিক ছিলো না অবশ্যই। তবে তাতে জেনে বুঝে কারও ক্ষতি করার উদ্দেশ্যও ছিল না একেবারে। শেষটায় অবশ্য নিজেদের করা ভুলকে ঠিক করার প্রচেষ্টাও ছিলো এবং তা দিয়েই শেষ হয় ছবিটি।
ছবিতে তিন প্রধান নারী চরিত্রে টাবু, কারিনা ও কৃতি দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। মূল ধারার কমার্শিয়াল বলিউড চলচ্চিত্রের মান বিবেচনায় নিলে তারা সমালোচনার অবকাশ খুব একটা রাখেননি। টাবু বরাবরের মতোই সুঅভিনয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন পুরো ছবিতে। আকর্ষণীয় ছিল কারিনা'র অভিনয়ও। চরিত্রের রকমভেদে নিজের অভিনয়ের ওঠা - নামার বিষয়টি বেশ ভালোই রপ্ত করতে পেরেছেন তিনি। আর দুই সিনিয়রের পাল্লায় পড়ে জুনিয়র কৃতি খারাপ করার সুযোগই পাননি, দুই সিনিয়রকে দিয়েছেন যোগ্য সঙ্গত।
জানা গেছে, আলোচিত ‘ক্রু’ ছবির বাজেট ছিল ৫০ কোটি রুপির বেশ কম। কিন্তু এরই মধ্যে বিশ্বব্যাপী ৮০ কোটি রুপির মতো বেশি ব্যবসা করে ফেলেছে ছবিটি। নারীপ্রধান চরিত্রের বলিউডি ছবি হিসেবে মুক্তির দিনে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করেছে ‘ক্রু’, ভেঙে দিয়েছে আগের সব রেকর্ড। ব্যবসার নিরিখে স্পষ্টতই হিট এই ছবি। এবার আয়ের দিক থেকে ১০০ কোটি রুপির ঘরে নাম লেখানোর অপেক্ষা। যেভাবে দর্শকদের মুখে মুখে ‘ক্রু’ ছবির প্রশংসা ছড়িয়েছে, তাতে এই অপেক্ষা বেশি দীর্ঘ হবে বলে মনে হচ্ছে না। শুধু সাধারণ দর্শক নয়, সমালোচকেরাও ছবিটির গল্প ও শিল্পীদের অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন বেশ।
এক কথায়, ‘ক্রু’ একটি উপভোগ্য ছবি। কেউ সারাদিনের ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে প্রাণখুলে একটু হাসতে চাইলে, তাকে দেখতেই হবে ছবিটি। হ্যাঁ, তথাকথিত কমার্শিয়াল ছবির সব উপকরণই এই ছবিতে আছে। তাতে যুক্তিবোধকে কখনও কখনও একপাশে সরিয়ে রাখতেও হয়। তবে এতটুকু ত্যাগ স্বীকার করলেই প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে পাবেন নির্মল বিনোদন। এতটুকু বলা যায়।