রংপুর মহানগর প্রতিনিধি:
হাঁকডাক দিয়ে নানা আয়োজনে জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হলেও, জাতীয় পার্টির মূল ঘাঁটি রংপুর থেকে কোনো সাড়া পায়নি রওশনপন্থিরা। দলের অনেক শীর্ষ নেতা রওশনের দিকে ঝুঁকলেও রংপুরের নেতাকর্মীরা তাতে যুক্ত হচ্ছেন না। এখন পর্যন্ত জি এম কাদেরের নেতৃত্বে একাট্টা তারা। এখানকার কোনো প্রতিনিধি আগামীকাল শনিবার রওশনের সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকায় যাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন জাপা নেতারা।
জানা গেছে, ভোট, জোট আর জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে ভাবি রওশন এরশাদের সঙ্গে দেবর জি এম কাদেরের দা-কুমড়ো সম্পর্ক। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর এই দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হয়ে ওঠে। এরশাদবিহীন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ভোট ও জোট নিয়ে দেবর-ভাবির মধ্যে নানা কথা চালাচালি হলেও শেষ পর্যন্ত নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন জি এম কাদের। এ কারণে নির্বাচনে অংশ নেননি রওশন এরশাদ ও তার ছেলে সাদ এরশাদ এবং তাদের অনুসারীরা। ভোটের পর জি এম কাদেরকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর চেষ্টা শুরু করেন রওশন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতায় বঞ্চিত ও নির্বাচনে পরাজিত অনেক নেতা জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নুর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে রওশনের সঙ্গে যোগ দেন। এর পরই জাপার ভাঙন তীব্র হয়। রওশনের ডাকা সম্মেলনের মধ্য দিয়ে যা চূড়ান্ত রূপ পেতে যাচ্ছে। তবে দলটির মূল শক্তি রংপুরে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে করেন, জাতীয় পার্টির ঘাঁটি রংপুর। রাজনীতিতে দলটির টিকে থাকার ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা রেখেছে রংপুরের মানুষ। সেই রংপুরেই সমাহিত হয়েছেন প্রয়াত এরশাদ। তাই রওশন এরশাদের অনুসারীরা বহু চেষ্টা করেও এখানকার নেতাকর্মীদের বিভক্ত করতে পারেননি।
তাদের মতে, রওশন এরশাদ সব কুল হারিয়েছেন। এখন কোনো কিনারা না পেয়ে দল থেকে বহিষ্কৃত এবং দলছুটদের নিয়ে সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের এ উদ্যোগ নিয়ে রংপুরের নেতাকর্মীরা ভাবছেন না। এ নিয়ে দলের কোনো পর্যায়েই আলোচনা নেই।
রংপুর অঞ্চলের একাধিক জাপা নেতা জানান, জেলা ও মহানগর কমিটির শীর্ষ নেতৃত্বসহ প্রায় সব নেতাকর্মী জি এম কাদেরের সঙ্গে আছেন। রওশনপন্থিদের কোনো তৎপরতা রংপুরে নেই। তারপরও রংপুরের কোনো নেতাকর্মী যেন এই সম্মেলনে না যান, সে বিষয়ে তৎপর রয়েছেন এখানকার সিনিয়র নেতারা। মাঠপর্যায়ে নেতাকর্মীদের খোঁজখবরও রাখছেন তারা।
জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার পর সম্প্রতি রংপুরে তিন দফা সফর করেছেন জি এম কাদের। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সব ভুলে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে সিনিয়র নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই অর্থে হাই প্রোফাইলের কোনো নেতাই রওশন এরশাদের পক্ষে অবস্থান নিতে দেখা যায়নি। অন্যদিকে রওশনপন্থি নেতা হিসেবে পরিচিত মসিউর রহমান রাঙ্গা দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর থেকেই নীরব। বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা তথ্য মতে, তিনিও রওশনের সম্মেলনে যাচ্ছেন না। এ কারণে রংপুর অঞ্চলে রওশন এরশাদের পক্ষে কোনো নেতা প্রকাশ্যে নেই।
স্থানীয় নেতাকর্মীদের দাবি, জাপার কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এই অঞ্চলের তৃণমূল নেতাদের একাট্টা করে রেখেছেন।রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সিনিয়র সহসভাপতি লোকমান হোসেন কালবেলোকে বলেন, ‘শুধু রংপুর কেন, রংপুর বিভাগের একজন নেতাকর্মীও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যার সঙ্গে রওশনপন্থিদের সম্পর্ক রয়েছে। যারা সম্মেলন ডেকেছেন, তাদের বেশিরভাগই জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত।
রংপুর সিটির ৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রসমাজের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম জানান, ছাত্রসমাজের প্রত্যেক নেতাকর্মী জি এম কাদেরের নেতৃত্বকে ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছেন। আগামীতেও সেভাবেই পথ চলবেন।
জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব এস এম ইয়াসির বলেন, ‘জি এম কাদেরের পক্ষে সব নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ আছেন। রওশন এরশাদের সম্মেলনের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটা তাদের ব্যক্তিগত সম্মেলন হতে পারে। কারণ সম্মেলন করতে হলে নিয়মতান্ত্রিকভাবে একটি রাজনৈতিক দলের কাঠামো থাকতে হবে, যা তাদের নেই।
জাপার কো-চেয়ারম্যান, জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি এবং সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘দলে বিভেদ বা বিরোধ থাকতেই পারে। তবে রংপুর অঞ্চলে রওশন এরশাদ পক্ষের কোনো অস্তিত্ব নেই। আমরা এরশাদের মূলনীতিতে বিশ্বাসী। তিনি জি এম কাদেরকে নেতা করে গেছেন। আমরা তার দেখানো নীতিতেই চলব। তিনি বলেন, রংপুর অঞ্চলে জি এম কাদেরের নেতৃত্বে দল এগিয়ে যাচ্ছে, যাবে। কে চলে গেলেন, কারা কাউন্সিলের ডাক দিলেন, এটি কোনো বিষয় নয়। এই অঞ্চলে দলে কোনো বিভক্তি নেই।