পঞ্চগড় সংবাদদাতা : সরকারি কর্মচারি বিধিমালা লঙ্ঘণ করে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ও বক্তব্য প্রদানের অভিযোগ ওঠেছে পঞ্চগড়ের এক উপজেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
আজমল আজাদ রয়েল নামের এই কর্মকর্তা পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় কর্মরত আছেন। সম্প্রতি জিয়া পরিষদ আয়োজিত মিছিল ও সভায় অতিথি হিসেবে অংশ নেন তিনি। রাখেন বক্তব্যও, নিজেকে সাবেক ছাত্রদল নেতা হিসেবে পরিচয় করিয়ে বিএনপি নেতাকে সংসদ সদস্য হিসেবে দেখবার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
বোদা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে ‘শহীদ জিয়া ও আমাদের গনতন্ত্র’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি নির্বাহী কমিটির পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদন ফরহাদ হোসেন আজাদ। এখানে সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা আজমল আজাদ রয়েলের দেয়া ওই বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
সেখানে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘বক্তব্য কি দিবো এই যে আজকে স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছি, এটাই আমার কাছে বড় প্রাপ্য। বিগত ১৫ বছর আমরা কোথাও কোন বক্তব্য দেয়ার সাহস পাইনি। আমি অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলছি, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্র রাজনীতি করলেও কিন্তু সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করে গেছি। তবুও আমাকে অনেক সাফার করতে হয়েছে, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ছিলাম বলে ২০২০ সালে তারা আমাকে বান্দরবন-খাগড়াছড়িতে বদলি করার জন্য ওঠে পড়ে লাগলো।
ভিডিওতে তিনি বলেন, শহীদ জিয়ার মত সৎ নেতা পৃথিবীর ইতিহাসে নেই। আজকে যে শিশুদের বিকাশ- আমরা জানি শিশুদের বিকাশে শহীদ জিয়াই শিশু একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আমি যেহেতু প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারে চাকরি করি; অভিভাবকদের বলবো, প্রতিটি শিশুর মাঝে শহীদ জিয়ার চেতনা ও আদর্শ ছড়িয়ে দিতে হবে। আমরা এটি চাই এবং করে ছাড়বো। ইতোমধ্যে আমরা কিন্তু আমাদের নেতার নির্দেশেই প্রতিটি বিদ্যালয়ে যে ম্যানেজিং কমিটি গঠিত হয়েছে- আমি আমার শিক্ষকদের বলেছিলাম, আমাদের জাতীয়তাবাদী দলের যেসব লোক তাদেরকে ম্যানেজিং কমিটিতে নিয়ে আসতে হবে। ইতোমধ্যে আমরা সেটি করতে পেরেছি।
তিনি সভার প্রধান অতিথি ফরহাদ হোসেন আজাদকে স্মরন করিয়ে দিয়ে বলেন, আজকে আমাদের যিনি নেতা আছেন, আজাদ ভাই। তার মনে আছে কি-না জানিনা, তিনিই কিন্তু আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে হল শাখা ছাত্রদলের সম্মেলনে সহ-সভাপতি ঘোষণা দিয়েছিলেন। এজন্য আমি উনার কাছে চির কৃতজ্ঞ। একই সাথে আগামী দিনে যে নির্বাচন হবে, আমাদের সকলে মিলে একাতাবদ্ধ হয়ে আজাদ ভাইকে কিন্তু মাননীয় সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চাই এবং এটি করে ছাড়তে হবে।
একজন সরকারি কর্মকর্তার সরাসরি এমন রাজনৈতিক বক্তব্য আইন বিরোধী বলছেন সচেতন মহল। আইন দেখিয়ে তারা বলছেন, সরকারি কর্মচারি বিধিমালা, ১৯৭৯ এর বিধি-৫ এর উপবিধি-১ অনুসারে কোন সরকারি কর্মচারি কোন রাজনৈতিক দলের বা কোন রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠণের সদস্য হইকে অথবা অন্য কোনভাবে উহার সাথে যুক্ত হতে পারবেননা, অথবা বাংলাদেশে বা বিদেশে কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করিতে বা কোন প্রকারেই সহায়তা করিতে পারিবেননা।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) পঞ্চগড় জেলা শাখার প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম ভূট্টু বলেন, তিনি একজন সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা হয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সুস্পষ্টভাবে আইন লঙ্ঘন। তার বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপের দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজমল আজাদ রয়েল বলেন, জিয়া পরিষদ শিক্ষকদের একটা সংগঠণ। শিক্ষকদের ডাকেই ওই সভায় গিয়েছিলাম, সেটা কোন রাজনৈতিক কিছু ছিলোনা। বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু জিয়া পরিষদের কথা বলা হয়েছে, সুতরাং দুই একটি কথা আসছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সমেশ চন্দ্র মজুমদার বলেন, এই ধরণের কিছু আমি অবগত নই। তবে অভিযোগ পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো।