স্টাফ রিপোর্টার : ইকবাল বাহার
বস্তা দৌড়, বিস্কুট দৌড়, সুঁই সুতা দৌড়, ব্যাঙ দৌড়, মোরগ যুদ্ধ, রশি টান, হাডুডু, লংজাম্প, হাই জাম্প, বালিশ খেলা, হাড়িভাঙ্গা, লৌহবল নিক্ষেপ, রোশী লাফ, কঙ্কর নিক্ষেপ ইত্যাদি যুগ যুগ ধরে গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় খেলা ছিল। বর্তমানে ৯০ ভাগ শিশুরাই জানে না এসব খেলা সম্পর্কে। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলাগুলো বর্তমানে প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলেও খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
আধুনিকতার স্পর্শ আর সভ্যতার ক্রমবিকাশে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এসব খেলা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ভিডিও গেইম আর টিভি সিরিয়ালের দিকে ঝুঁকে পড়ায় শিশুরা এ সব খেলা থেকে বঞ্চিত হয়ে পরছে দিন কে দিন। একইসঙ্গে এসব খেলাও বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
এক সময় বিদ্যালয়ে টিফিনের সময় এবং বিদ্যালয় ছুটি দেওয়ার পর ছোট ছোট শিশুরা এসব খেলায় মেতে উঠতো। কিন্তু আজকাল মধ্যবয়সী থেকে শুরু করে প্রবীণরাও এসব খেলাধুলা না দেখতে পেয়ে ভুলতে বসেছে এ সব খেলা।
[caption id="attachment_1840" align="alignnone" width="300"] গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সুইঁ সুতা দৌড় খেলা[/caption]
পঞ্চগড়ের হাড়িভাসা ইউনিয়নের হাওড়া পাড়া গ্রামে হাওড়া পাড়া স্পোর্টিং ক্লাব ও ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড যুবদলের উদ্যোগে গতকাল দিনব্যাপী এসব ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলা নিয়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সকাল সারে ৮ টায় দিনব্যাপী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন হাওড়াপাড়া আদর্শ স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন খাঁ।
২নং ওয়ার্ড বিএনপি'র সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন এর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ইউনিয়ন বিএনপি'র সভাপতি, জিয়াউল হক জিয়া, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন, ইউনিয়ন বিএনপি'র সাধারণ সম্পাদক, মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান (বুলবুল), সাংগঠনিক সম্পাদক, মোহাম্মদ আলী সবুজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, আব্দুল মান্নান, ইউনিয়ন কৃষক দলের সহ-সভাপতি, আব্দুর রাজ্জাক, ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক, আলমগীর হোসেন, সদস্য সচিব, ময়নুল ইসলাম মুন্না, ইউনিয়ন কৃষক দলের সদস্য সচিব, আব্দুল হামিদ প্রমূখ।
ক্লাবের সদস্য হযরত আলী বলেন, গ্রামীণ পরিবেশে ঐতিহ্যবাহী এই গ্রামীণ খেলাগুলো আমরা আয়োজন করতে পেরে অনেক আনন্দিত। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন এই খেলাগুলো ব্যাপক ভাবে সমাজে প্রচলিত ছিলো কিন্তু সময়ের ব্যাবধানে এই ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলাগুলো বিলুপ্তির পথে। সরকার মহদাশয়ের উচিৎ আমাদের এই ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলা গুলো টিকিয়ে রাখা।
চতুর্থ শ্রেনীর শিক্ষার্থী মাইশা জান্নাত মিম বলেন, আমি জীবনে কখনো রশি টান খেলা, হাডুডু খেলা দেখিনি। আজ আমি এই দুটি খেলা দেখতে পেয়ে অনেক আনন্দিত, অনেক খুশি।
ময়না আক্তার নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, বস্তা দৌড়, বিস্কুট দৌড়, সুঁই সুতা দৌড়, ব্যাঙ দৌড়, মোরগ যুদ্ধ, রশি টান, হাডুডু, লংজাম্প, হাই জাম্প, বালিশ খেলা, হাড়িভাঙ্গা, লৌহবল নিক্ষেপ, রোশী লাফ, কঙ্কর নিক্ষেপ এসব খেলার নাম শুনেনি এমন মানুষ কমই আছে। এসব বাংলার ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলা। বর্তমান এসব খেলা গল্প হয়ে গেছে
[caption id="attachment_1841" align="alignnone" width="300"] গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী বালিশ খেলা[/caption]
প্রধান অতিথি জিয়াউল হক জিয়া বলেন, একসময় এই গ্রামীণ খেলাধুলা ছিল প্রতিভা বিকাশের অন্যতম মাধ্যম। এগুলো আমাদের আদি ক্রীড়া সংস্কৃতি, ঐতিহ্য। বর্তমানে গ্রামীণ খেলা বিলুপ্ত হতে হতে এসব খেলার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এসব খেলাখুলা শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর টিভির সিরিয়ালের দিকে শিশুরা ঝুঁকে পড়ায় ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এসব খেলা।
ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সভাপতি ও ২নং ওয়ার্ড বিএনপি'র সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন বলেন, আজ আমরা সকাল সাড়ে ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সবমিলিয়ে প্রায় ৪৫টি ইভেন্ট পরিচালনা করেছি। বিলুপ্তির পথে যে গ্রামীণ খেলাগুলো সেই সব খেলাগুলো আমরা আজ পরিচালনা করতপ পেরে অনেক খুশি এবং আনন্দিত। পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মহোদয় যদি আমাদের দিকে একটু সুদৃষ্টি রাখেন তাহলে ভবিষ্যতে আমরা আরো বড় আয়োজন করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।