স্টাফ রিপোর্টার : ইকবাল বাহার
পঞ্চগড়ের এক তরুনি অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের সময় বিএসএফের হাতে আটক হয়। পরে ভারতীয় মিডিয়া সেই মেয়েটিকে নিয়ে মিথ্যাচার করে। ভারতীয় গণমাধ্যমের ন্যক্কারজনক মিথ্যাচারে বিব্রত প্রিয়ন্তী রায় প্রমি'র(অর্পিতা) বাবা জয়দেব তার স্বজনসহ এলাকাবাসী। এমন মিথ্যাচারের নিন্দা জানান তারা।
এই তরুনির বাড়ি পঞ্চগড় পৌরসভার উত্তর জালাসি পাড়া গ্রামে। ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুসারে গত মঙ্গলবার অবৈধভাবে ভারতের উত্তর দিনাজপুর ফতেপুর বিওপি দিয়ে প্রবেশের সময় বিএসএফ আটক করে চোপরা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ। পরে তাকে বিচারক কোচবিহারের শহীদ বর্ধনা সৃতি আবাসিক হোমে পাঠিয়ে দেয়।
ভারতীয় মিডিয়া 'মাধ্যম' প্রচার করে অর্পিতা (যদিও তার নাম প্রিয়ন্তী রায় প্রমি) ইসকন ভক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে অত্যাচারের ভয়ে বাবা ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধি। বর্তমানে প্যারালাইজড-মা খুবই অসুস্থ্য, তারা আসতে পারবেনা। বাংলাদেশ তাদের জন্য অনিরাপদ, তাই ওই তরুনিকে নিরাপদের জন্য ভারতের আত্মীয়র বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। তবে ওই ভিডিওতে তরুনির কোন বক্তব্য ছিলনা। ভারতীয়া মিডিয়ার নৈতিকতা বিবর্জিত নিজের বয়ানে সেখানকার হলুদ সাংবাদিকরা ভিডিওতে বলেন, বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুরা খুবই বিপদে, হিন্দুদের উপর সরকারি আক্রমন চলছে। বিমাতা সুলভ আচরন করছে পুলিশও। তাই তারা প্রানভয়ে আইন ভেঙ্গে ভারতে নিরাপত্তার জন্য আসছে।
ওই তরুনির ভারতীয় আত্মীয় দাদু অরানন্দ অধিকারী ভিডিওতে বলতে দেখা গেছে, বাংলাদেশে তাদের হুমকি দিচ্ছি, বাড়ি থেকে চলে যেতে বলছে, তরুনিকে টর্চার করছে, অপহরন করবে। প্রাণভয়ে চলে আসছে।বাবা মায়ের সামনে যদি মেয়েকে টেনে নিয়ে যায়, তাহলে ওরা সেখানে থাকে কি করবে। দুঃখে চলে আসছে।
পঞ্চগড়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজমান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিন্দু-মুসলাম নির্বিশেষে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক উপস্থিতির মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু, সুন্দর পরিবেশে চলছে পাঠদান, খেলাধুলা। স্বাভাবিক নিয়মে চলছে পূজা-অর্চনাসহ দৈনন্দিন কাজকর্ম। পূর্ব পুরুষের আমল থেকেই তারা হিন্দু-মুসলমান পরস্পর সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে শান্তিতে বসবাস করছে বলে জানায় স্থানীয় হিন্দু নেতারা।
ভারতে আটক অর্পিতা ( প্রিয়ন্তী রায় প্রমি) বাবা জয়দেব চন্দ্র রায় তার মা অনুরাধা রানী বলেন, আমরা এখানে হিন্দু-মুসলিম মিলেমিশে বসবাস করছি। কোন সমস্যা নাই। আমরা ইসকন ভক্ত না। আমরা সনাতনী।ভারতীয় মিডিয়া যা প্রচার করছে তা সম্পন্ন ভিত্তিহীন, মিথ্যা, বানোয়াট এবং কাল্পনিক। আমরা পঞ্চগড়ে তথা বাংলাদেশ শান্তিতে রয়েছি। আমরা ভালো আছি। আমরা ভারতীয় গণমাধ্যম "মাধ্যম" এর বক্তব্যের তিব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় শারদীয় দূর্গাপুজা মন্ডপ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী মনোরঞ্জন বনিক বলেন, বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া যা প্রচার করছে তা মিথ্যা বানোয়াট। বর্তমান সময়ে আমরা নিরাপদে আছি, ভালো আছি। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বিশ্বজিৎকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল কিন্তু আমরা কোন প্রতিবাদ করতে পারিনি। বাংলাদেশেকে অস্থিতিশীল করতে এবং বাংলাদেশের সম্মান বিশ্বের কাছে কমাতে ভারতীয় গণমাধ্যম এমন মিথ্যা, বানোয়াট, মনগড়া সংবাদ প্রচার করছে। আমরা এর তিব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মুন্সি জানান, ভারতীয় মিডিয়া উল্টা পাল্টা প্রচার করছে যেটা পুরোপুরি ভুয়া সংবাদ। খবর পেয়ে তরুনির বাসায় গিয়ে খবর নেওয়া হয়েছে। তার বাবা-মা সম্পুর্ন সুস্থ্য। তারা ইসকন ভক্ত না, সনাতনী।মুলত তরুনি অসুস্থ্য ভিসা ছাড়া চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে আটক হয়েছে।