নিজস্ব প্রতিবেদক: এইচ.এম.বিল্লাল হোসেন রাজু
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। আত্মগোপনে আছেন ক্ষমতাচ্যুত সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সব স্তরের নেতারা। তবে এই পরিস্থিতিতেও গোপালগঞ্জে বিক্ষোভ করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এ অবস্থায় ১৫ আগস্ট ঘিরে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ সংগঠিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিরও আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে সতর্ক থাকবেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপি’র সিনিয়র নেতারা বলছেন, পতিত স্বৈরাচার ও তার দোসররা এখনো চক্রান্ত করছে। তারা প্রতিবিপ্লবের লক্ষ্যে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করে দিতে চায়। সেজন্য বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলো সারা দেশে তাদের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে সতর্ক থাকা এবং নৈরাজ্য প্রতিরোধে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
তিন দিনের লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে গতকাল বুধবার থেকে দেশব্যাপী মাঠে নেমেছে বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবারও সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে। যে কোনো নৈরাজ্য প্রতিরোধে কঠোর হবেন দলটির নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘকে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। খুনের নির্দেশ ও মদদদাতা হিসেবে শেখ হাসিনাসহ পুলিশের সাবেক আইজি এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নামে একাধিক মামলার আবেদন করা হয়েছে। একই ধরনের শঙ্কা থেকে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করাও।
বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন হলেও তাদের দোসররা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। এ বিষয়ে আমাদের নেতাকর্মীরা সজাগ এবং সতর্ক আছেন। সবার প্রতি আহ্বান, স্বৈরাচার হাসিনার কোনো উসকানিতে পা দেবেন না। সবাই সতর্ক থাকুন। কোথাও কোনো নৈরাজ্য বা অপরাধ সংঘটিত হলে নিজেরা প্রতিরোধ গড়ে তুলুন, তা না হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানান।
বিএনপি নেতারা বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী ছাত্র-জনতার ওপর প্রতিশোধ নিতে আওয়ামী লীগ নীল-নকশা করছে। তারা নিজেরাই কোনো অপকর্ম ঘটিয়ে তার দায় সুকৌশলে বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির ওপর চাপানোর জন্য সামাজিক গণমাধ্যমকে ব্যবহার করছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পদ ও ধর্মীয় স্থাপনাকে টার্গেট করা হয়েছে। বিজয়ী শক্তি তথা জনগণের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির অপচেষ্টায় তারা মরিয়া হয়ে লেগেছে, তবে এ বিষয়ে বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো সজাগ রয়েছে।
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু কালবেলাকে বলেন, আমরা সংঘাত হানাহানি চাই না। হাজারো ছাত্রজনতার প্রাণ ও রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশের মানুষ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা পেয়েছেন। এই অর্জন কেউ নস্যাতের চক্রান্ত করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। তা ছাড়া কোনো দুষ্কৃতকারী নৈরাজ্য করলে তাদের শক্ত হাতে প্রতিহত করা হবে।
তিনি বলেন, গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনা’র বিচার দাবিতে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়ার জন্মদিন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের জন্য ১৬ আগস্ট (শুক্রবার) দোয়া অনুষ্ঠান হবে।
বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করছেন, সরকার পতনের পর দেশে আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলার মতো কোনো নেতা দেখা যাচ্ছে না। এই নীরবতা রহস্যজনক। তারা আবারও সংগঠিত হয়ে কোনো কিছু করতে পারে। এজন্য সারা দেশে দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড।
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন বলেন, ‘স্বৈরাচারী হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তার ছেলে বিদেশে বসে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে। তারা ষড়যন্ত্র করছে দেশে কোনোভাবে নৈরাজ্য, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা বা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানো যায় কি না? এ জন্য বিভিন্ন দিবস উপলক্ষ বানানো হচ্ছে। তবে আমরা তাদের শক্ত হাতে রুখে দেব।