আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক:
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৯৩টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে নির্বাচনের এই তৃতীয় দফায়।
প্রচন্ড গরমের মধ্যেও ভোট দিতে ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছে মানুষ।গরমে স্বস্তি পেতে সঙ্গে পানির বোতল এবং ফলও নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। ভোটকেন্দ্রে লাইনে দাঁড়ানো এড়াতে সকাল সকালই কেন্দ্রে পৌঁছানোর পরিকল্পনা করেছেন ভোটাররা।
মোট ১৩৩১ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে এইদিনের ভোটগ্রহণে।এ দফায় ভোট হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের ৪টি, অসমের ৪টি, বিহারের ৫টি, ছত্তীসগঢ়ের ৭টি, গোয়ার ২টি, গুজরাতের ২৫টি, কর্নাটকের ১৪টি, মধ্যপ্রদেশের ৯টি, মহারাষ্ট্রের ১১টি, উত্তরপ্রদেশের ১০টি, দাদরা ও নগর হাভেলিতে ১টি এবং দমন ও দিউতে ১টি আসনে।
এ পর্বের ভোটগ্রহণ হয়ে গেলে ৫৪৩ আসনের মধ্যে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের প্রায় অর্ধেক আসনে ভোট সম্পন্ন হবে। অমিত শাহ, শিবরাজ সিং চৌহান, প্রহ্লাদ প্যাটেল, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, দিগ্বিজয় সিংসহ একাধিক হেভিওয়েট নেতা এই ভোটে পরীক্ষার মুখে রয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মঙ্গলবার সকাল সকালই ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছেন। আমদাবাদের এক স্কুলে ভোট দেন তারা। তাদের দেখতে রাস্তার দু’পাশে উৎসাহী জনতা ভিড় করেছে। তৃতীয় দফায় ভোটারদের উদ্দেশে রেকর্ড সংখ্যায় ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন মোদী।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ভোটারদের উদ্দেশে লেখেন, ‘‘যারা আজ তৃতীয় দফার নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন, তারা অবশ্যই একটি দুর্নীতিমুক্ত সরকার গঠনের পক্ষে ভোট দিন।
ইতোমধ্যেই দুই দফার ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে লোকসভা নির্বাচনে।তৃতীয় দফার পর আর চার দফায় ভোট বাকি থাকবে।
বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের লোকসভা নির্বাচনের সাত দফার ভোটগ্রহণ শুরু হয় গত ১৯ এপ্রিল। শেষ হবে আগামী ১ জুন। নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হবে ৪ জুন। এবারের নির্বাচনে ভারতে ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৯৭ কোটি।
ভারতের সাধারণ নির্বাচন সাধারণত প্রতি পাঁচ বছর পরপর এপ্রিল এবং মে মাসে অনুষ্ঠিত হয়। ভোটার এবং নির্বাচনী কর্মকর্তারা এ সময়টিতে গ্রিষ্মের গরমের মধ্যেই ভোট দিতে অভ্যস্ত। কিন্তু এবছর ভারত এবং এশিয়ার অন্যান্য অনেক অংশেই গ্রিষ্মে রেকর্ড গরম পড়েছে। প্রচণ্ড গরমে গতমাসে ভারতে অন্তত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এপ্রিলেও ভারতের কেন্দ্রীয় এক মন্ত্রী নিতিন গড়করী মহারাষ্ট্রে এক নির্বাচনী সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় ভিড় এবং গরমে অচেতন হয়ে গিয়েছিলেন। এপ্রিলের মত চলতি মে মাসেও তীব্র গরম থাকবে বলেই পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর।
বিষয়টি মাথায় রেখে নির্বাচন কর্তৃপক্ষ ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের পানির বোতল সরবরাহ করছে এবং ভোটের সময়ও বাড়াচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ ধারণা করছেন, চরম গরমের কারণে ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে।
গত সপ্তাহে ইন্ডিয়া টুডের নিউজ চ্যানেলে এক সাক্ষাৎকারে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এন গোপালস্বামী এক সাক্ষাৎকারে এমন আশঙ্কার কথা বলেছিলেন। গরমের কারণে ২০১৯ সালের তুলনায় এবছর ভোটার সংখ্যা কম হতে পারে বলে ধারণা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। গত ১৯ এবং ২৬ এপ্রিলে হয়ে যাওয়া দুই দফা ভোটে অন্তত ৩ শতাংশ কম ভোটার উপস্থিতি ছিল।
ভোটাররা বলছেন তারা গরম নিয়ে শঙ্কিত। তবে তারা এর জন্য পূর্বসতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেবেন। এক ভোটার জানান, তিনি তার মুখ এবং শরীর ঢেকে ভোট দিতে যাবেন। আরেক ভোটার বলেন, মানুষের ভিড় এবং গরম এড়াতে তিনি অনেক সকালেই ভোট দিতে গেছেন।
অনেক ভোটার আবার সাহস দেখিয়ে বলছেন, গরম উপেক্ষা করেই নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে ভোট দিতে যাবেন। কারণ, এই গণতান্ত্রিক অধিকার নষ্ট করতে চান না তারা।
এক ভোটার বলেন, উচ্চ তাপমাত্রার কারণে আমাদের ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত নয়। নাগরিক হিসাবে ভোট দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।