নিজস্ব প্রতিবেদক:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নতুন সদস্যদের শপথ গ্রহণ শেষ হয়েছে। শেষ হয়েছে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনও। সংসদের প্রথম অধিবেশন এখন চলছে। বাকি আছে সংরক্ষিত নারী ৫০ আসনের নির্বাচন। চলতি সপ্তাহে হতে পারে তফসিল। এরপর দলীয়ভাবে চূড়ান্ত হবে, কারা হচ্ছেন সংরক্ষিত এমপি। তবে, নতুন করে গুঞ্জন শুরু হয়েছে, বাড়ছে মন্ত্রিসভার কলেবর।
দ্বিতীয় দফায় কারা মন্ত্রিসভায় স্থান পাচ্ছেন, নতুন নাকি পুরাতন সদস্যরা সব মহলে চলছে এমন আলোচনা। তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারাও। তাদের মন্তব্য, শিগগিরই বাড়তে পারে মন্ত্রিসভার আকার।
গত ১১ জানুয়ারি টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীসহ মোট ৩৭ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীও শপথ নিয়েছেন। এর মধ্যে ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী। আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা মনে করছেন, চলতি মাসের (ফেব্রুয়ারি) শেষের দিকে বাড়তে পারে মন্ত্রিসভার আকার। আসন্ন সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভার সদস্য বাড়ানো হতে পারে। এমনকি সংরক্ষিত নারী আসন থেকে টেকনোক্র্যাট কোটায় (সংসদ সদস্য নন এমন) মন্ত্রীও হতে পারেন এমন গুঞ্জনও চলছে। তবে, এটা নিশ্চিত যে দ্বিতীয় দফায় কারা মন্ত্রিসভায় স্থান পাবেন, সেটা দলের হাইকমান্ড ছাড়া কেউ-ই জানেন না।
মন্ত্রিসভার কলেবর বড় হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা একটু বাড়তে পারে। কারণ, এখানে রিজার্ভ সিটগুলো, নারীদের জন্য সংরক্ষিত যেসব আসন, সেসব আসনের নির্বাচন শেষ হলে সেখান থেকেও যুক্ত হতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করলে তিনি যুক্ত করতে পারেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার টিকিট পেয়েও ভোটের মাঠে নেমে হেরেছেন তিন মন্ত্রী। তারা হলেন- বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য। মাহবুব আলী ও এনামুর রহমান দুবারের সংসদ সদস্য ছিলেন। স্বপন ভট্টাচার্য তিনবার জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। নির্বাচনের মাঠে তারা এবার পরাজিত হয়েছেন।
এ ছাড়া, এবার নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন আগের মন্ত্রিসভার ১৪ মন্ত্রী, নয়জন প্রতিমন্ত্রী ও দুজন উপমন্ত্রী। আলোচিত মন্ত্রীদের মধ্যে বাদ পড়েছেন- কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ।
প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে বাদ পড়েছেন- শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, স্থানীয় সরকার, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেছা। এ ছাড়া, গতবারের তিন উপমন্ত্রীর মধ্যে দুজনই এবার বাদ পড়েছেন। তারা হলেন- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার এবং পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম। টেকনোক্র্যাট পদ থেকে পদত্যাগ করা ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলমও এবারের মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, বর্তমান মন্ত্রিসভার বেশিরভাগ সদস্য নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন। বিভিন্ন কারণে বাদ পড়েছেন অনেক পুরাতন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। মন্ত্রিসভার কলেবর বাড়লে স্থান পেতে পারেন আওয়ামী লীগের ত্যাগী, অভিজ্ঞ ও তৃণমূলের জনপ্রিয় সংসদ সদস্যরা। সরকারের কাজের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় মন্ত্রিসভার আকার বড় করার চিন্তাভাবনা চলছে। এক্ষেত্রে তরুণদের প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে।
আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনের পর চলতি মাসের শেষের দিকে মন্ত্রিসভার আকার বাড়তে পারে। দ্বিতীয় দফায় সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে থেকেও একজন মন্ত্রিসভায় সদস্য হতে পারেন। ১৪ দলীয় জোটেরও কেউ এখানে স্থান পেতে পারেন।
গত সংসদে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ছিলেন ৪৭ জন। তাদের মধ্যে প্রথমে শপথ নেন ২৫ মন্ত্রী এবং ১৯ প্রতিমন্ত্রী এবং তিনজন উপমন্ত্রী। দ্বিতীয় দফায় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়।