নিজস্ব প্রতিনিধি:
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিজেদের ‘বিপ্লবী সরকার’ বলে ঘোষণা করতে হবে বলে জানিয়েছেন নবাব সলিমুল্লাহ একাডেমির সভাপতি মুহাম্মদ আব্দুল জব্বার। সেই সঙ্গে আওয়ামী সরকারের সহায়ক আইনজীবীদের সনদ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তিনি। আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে নবাব সলিমুল্লাহ একাডেমি আয়োজিত ‘বিপ্লব, বিপ্লবী সরকার ও আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ দাবি জানান তিনি।
মুহাম্মদ আব্দুল জব্বার বলেন, ‘এই সরকারকে নিজেদের বিপ্লবী সরকার বলে ঘোষণা দিতে হবে। এত রক্ত ঝরার পরে, এত ছাত্র-জনতা পঙ্গু হওয়ার পরে, আবারও আমরা সেই চর্বিত চর্বনে শপথ নিলাম। দ্বিতীয়ত, সংবিধান বাতিল করতে হবে। বিপ্লবী সরকার হয়ে গেলে এমনিতেও আর সংবিধান থাকবে না।
তিনি বলেন, ‘দেশটা এখন যেভাবে চলছে, দীর্ঘদিন ধরে অসংগতির মধ্যে ছিলাম, এখনো তেমন চলছে। আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা এখনো এই সরকার পূরণ করতে পারছে না। রাজনৈতিক মামলাগুলো এখনো তুলে নেওয়া হয়নি, যেসব আইনজীবী সরকারের দালাল ছিল, তারা এখনো আদালতে আসা-যাওয়া করে। তাদের অপরাধের বিচার করে, তাদের সনদ বাতিল করতে হবে, যাতে তারা আর আইন অঙ্গনে ঢুকতে না পারে।
আব্দুল জব্বার প্রস্তাব করে বলেন, ‘নবাব সলিমুল্লাহ আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। আমরা তাঁর নামে অন্তত একটি রাস্তার নামকরণ করার কথা বলেছিলাম। আমি প্রস্তাব করছি, পল্টন থেকে তাঁতিবাজার পর্যন্ত রাস্তাটি নবাব সলিমুল্লাহ’র নামে ঘোষণা করা হোক।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্যান ইসলামিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মো. মোস্তফা জামাল ভূঁইয়া। বিগত স্বৈরশাসককে আরও দুর্বল করতে তিনি সরকারকে নিজেদের বিপ্লবী সরকার ঘোষণা দেওয়া, সংবিধান বাতিল করা; পূর্বের নিয়োগকৃত রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ; স্বৈরশাসনের জন্য দায়ী সব ব্যক্তিকে বিচারের মুখোমুখি করা এবং বিচারকাজ সম্পন্ন করা; ভারতের সঙ্গে সব বৈষম্যমূলক চুক্তি বাতিল করা এবং মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার আহ্বান জানান।
গণভোটের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সংবিধানে “কোরআন ও সুন্নাহর পরিপন্থী আইন বাতিল বলে গণ্য হইবে” মর্মে একটি গণভোট ব্যতীত জাতীয় নির্বাচন নয়। কারণ, প্রত্যেকটি বিপ্লবের পর বিপ্লবের স্পিরিট কী হবে, এটি নির্ধারণ করা আবশ্যক। যে স্পিরিটের আলোকে পরবর্তী সংবিধান রচনা বা দেশ পরিচালনা করা হবে। এ অবস্থায় বিপ্লবী সরকারের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য কোরআন ও সুন্নাহকে মূলনীতি হিসেবে নির্ধারণের জন্য একটি গণভোটের আয়োজন করা আবশ্যক।
এনডিপির মহাসচিব মঞ্জুর হোসেন ঈসা বলেন, যারা ২০২৪ সালে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেছে তারা সকলেই আওয়ামী লুটেরাদের দোসর। এদের চিহ্নিত করে বয়কট করতে হবে। এখন নানা কৌশলে নানা রুপে আওয়ামী লীগ মাঠে আসার চেষ্টা করছে। আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
সভায় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, ‘বাংলাদেশ হচ্ছে একটা সোনার থালা। সেই মধ্যযুগেও ইউরোপ থেকে এখানে আসার জন্য তারা উদ্গ্রীব থাকত। আজকে সেই দেশকে ভিখারির দেশ বানিয়েছি আমরা। এই দেশে যাতে আর কোনো দৈত্য, স্বৈরাচার ক্ষমতায় না বসতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহসভাপতি রাশেদ প্রধান বলেন, ‘ভারত এবং হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন, বিপ্লব, সংগ্রাম ৩৫ দিনের নয়, গত ১৬ বছর ধরেই চলছে। সরকারের কয়েকজন ছাড়া এই সরকারের আর কেউ রাস্তায় ছিল না। তাই এই সরকার বিপ্লবী সরকার নয়। ৫ তারিখে যে বিজয় এসেছে, তাতে যদি আমরা খুশি হয়ে যাই, তাহলে বড় ভুল করছি। ভারতের “র”-এর পরিকল্পনায় এ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব আর কখনো বিপন্ন হতে দেব না।
দার্শনিক আবু মহী মূসা বলেন, ‘রাজনীতিবিদেরা মেধাবী, বিএসসি ক্যাডাররা মেধাবী, পুলিশরা মেধাবী, কিন্তু এই মেধাবীরা এত বছর ধরে কী করছে? এরাই দেশটাকে ধ্বংস করেছে। মেধাবী আর জ্ঞানী এক বিষয় না।
গণঅধিকার পরিষদের সদস্যসচিব ফারুক হাসান বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি করে বিপ্লবী সরকার গঠন করতে হবে। এ দাবি এখন সময়ের দাবি।
তিনি আরও বলেন, ‘৫ আগস্ট সরকার পতনের পর কথা ছিল দেশে বিপ্লবী সরকার গঠন করার, কিন্তু তা হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ফর্মুলা ভারতের দেওয়া। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সময় উপদেষ্টা আসিফ নজরুলও এর বিরোধিতা করেননি। এর পেছনে রহস্য রয়েছে। তাই বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি করে বিপ্লবী সরকার গঠন করতে হবে।
বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সাবেক সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শেখ মুজিব না হলে এই দেশে একনায়ক শাসন কায়েম হতো না। তিনি দেশে একনায়ক শাসন কায়েম করতে চেয়েছিলেন। শেখ মুজিব নায়কতন্ত্র কায়েম না করলে, তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা এক নায়িকা হতেন না।
এ ছাড়া সভায় ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত উর্দুভাষী সংখ্যালঘু কাউন্সিল বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আফজাল ওয়ার্সি, ন্যাশনাল কংগ্রেস বাংলাদেশের মহাসচিব ইকবাল হাসান স্বপন, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ প্রমুখ।